ভূমিকা -
পরিমাপের স্তরবিন্যাস (levels of measurement) অনুযায়ী, অর্ডিনাল স্কেল হলো নোমিনাল স্কেলের পরবর্তী ধাপ। এটি এমন একটি পরিমাপ পদ্ধতি, যা কেবল শ্রেণীবিভাগই করে না, বরং সেই শ্রেণী বা বিভাগগুলোর মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ক্রম (order) বা ক্রমিক বিন্যাস স্থাপন করে। এখানে তথ্যগুলোকে তাদের আপেক্ষিক অবস্থান (relative position) অনুযায়ী সাজানো হয়, তবে তাদের মধ্যেকার ব্যবধানের সুনির্দিষ্ট পরিমাণগত অর্থ থাকে না। এই স্কেলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি মানের আপেক্ষিকতা (relativity of magnitude) প্রকাশ করে, কিন্তু মানের সুষম ব্যবধান (equal interval) নিশ্চিত করে না।
উদাহরণস্বরূপ, একটি শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স অনুযায়ী ১ম, ২য়, ৩য়—এভাবে ক্রমিক স্থান নির্ধারণ করা অর্ডিনাল স্কেলের একটি আদর্শ উদাহরণ। এখানে আমরা জানতে পারি যে, ১ম স্থান অধিকারী ২য় স্থান অধিকারীর চেয়ে উন্নত, কিন্তু ১ম ও ২য় স্থানের মধ্যে পারফরম্যান্সের যে পার্থক্য, তা ২য় ও ৩য় স্থানের মধ্যেকার পার্থক্যের সমান বা সমান্তরাল—এমন কোনো তথ্য এই স্কেল থেকে পাওয়া যায় না।
ক্রমসূচক স্কেলের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ
১. ক্রম বা স্থান নির্ধারণ (Ordering or Ranking):
এই স্কেলের প্রধান ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হলো এটি কেবল বস্তু বা ঘটনাকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে না, বরং তাদের একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসারে সাজানোর সুযোগ দেয়। এই ক্রমটি কোনো বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
২. সমান ব্যবধানের অভাব (Lack of Equal Intervals):
অর্ডিনাল স্কেলের একটি মৌলিক সীমাবদ্ধতা হলো, এর ক্রমিক ধাপগুলোর মধ্যেকার ব্যবধান সুনির্দিষ্টভাবে সমান হয় না। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরীক্ষায় 'A' গ্রেড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর পারফরম্যান্স 'B' গ্রেডের চেয়ে ভালো, কিন্তু তাদের মধ্যেকার পার্থক্যের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ জানা যায় না।
৩. পরিমাণগত ও গুণগত বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ (Synthesis of Quantitative and Qualitative Attributes):
এই স্কেলটি নোমিনাল স্কেলের গুণগত শ্রেণীবিভাগের (qualitative classification) সঙ্গে একটি প্রাথমিক পরিমাণগত (quantitative) মাত্রা যুক্ত করে, যা হলো ক্রমিক বিন্যাস। এটি শ্রেণীবিভাগকে একটি আপেক্ষিক মাত্রায় উন্নীত করে।
৪. অগাণিতিক প্রক্রিয়া (Non-Arithmetical Operations):
অর্ডিনাল স্কেলে গাণিতিক প্রক্রিয়া, যেমন—যোগ, বিয়োগ, গুণ বা ভাগ—পরিচালনা করা অর্থহীন। যেমন, দুটি অর্ডিনাল মানকে যোগ করে বা বিয়োগ করে কোনো সুনির্দিষ্ট বা অর্থপূর্ণ ফলাফল পাওয়া যায় না, কারণ ব্যবধানগুলো সুষম নয়।
৫. বহু-স্তরীয় বিভাজন (Multi-level Categorization):
এই স্কেল একাধিক স্তর বা শ্রেণী ব্যবহার করে কোনো বৈশিষ্ট্যকে পরিমাপ করে। শিক্ষাবিজ্ঞানে এর বহুল ব্যবহার দেখা যায়, যেমন—শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টির মাত্রা পরিমাপের জন্য 'খুব অসন্তুষ্ট', 'অসন্তুষ্ট', 'নিরপেক্ষ', 'সন্তুষ্ট', 'খুব সন্তুষ্ট'—এই ধরনের রেটিং স্কেল ব্যবহার করা হয়।
৬. যথাযথ বিশ্লেষণ পদ্ধতির ব্যবহার (Appropriate Analytical Methods):
অর্ডিনাল স্কেলে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণের জন্য গাণিতিক গড় (arithmetic mean) বা আদর্শ বিচ্যুতি (standard deviation) এর মতো প্যারামেট্রিক কৌশলগুলো সাধারণত উপযোগী নয়। এই ধরনের তথ্যের জন্য মধ্যমা (median) বা পরিসর (range) এর মতো নন-প্যারামেট্রিক কৌশল ব্যবহার করা অধিক যুক্তিযুক্ত।
৭. শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রয়োগ (Application in Education):
শিক্ষার্থীদের পারদর্শিতার ক্রম নির্ধারণ (e.g., ১ম, ২য়, ৩য়), শিক্ষকের মূল্যায়ন (e.g., দুর্বল, গড়, ভালো, খুব ভালো), বা বিভিন্ন শিক্ষণ কার্যক্রমের ওপর শিক্ষার্থীদের মনোভাব পরিমাপ করার জন্য অর্ডিনাল স্কেল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার
অর্ডিনাল স্কেল পরিমাপের একটি এমন পদ্ধতি, যা বস্তু বা ঘটনাকে শ্রেণীবিভাগ ও ক্রমিক বিন্যাসে সাজাতে সক্ষম। তবে, এর ক্রমিক ধাপগুলোর মধ্যেকার সুনির্দিষ্ট ব্যবধানের অভাবে এটি উচ্চতর গাণিতিক বিশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত নয়।